হার্ট অ্যাটাক এর লক্ষণ - হার্টের জন্য ক্ষতিকর খাবার - মেয়েদের হার্টের সমস্যার লক্ষণ
হার্ট অ্যাটাক এর লক্ষণ
যদি সুস্থ থাকে এবং কোমরের আকার যদি খুব বেশি বেড়ে না যায়, পাশাপাশি রক্তচাপ ও কোলেস্টেরলের মাত্রা কম রাখা যায় তাহলেই হৃদরোগ প্রতিরোধ করা সম্ভব।
এমন কিছু খাবার সম্পর্কে জেনে নেওয়া যাক, যা হৃদপিন্ড ভালো রাখতে সাহায্য করে:
বর্তমান সময়ে হার্টের জন্য সবচেয়ে বেশি ওষুধের কাজ করে সবুজ চা। এটা শুধু রক্তের শিরাকেই সচল রাখে না; শিরাকে রক্ষাও করে। বর্তমান সময়ে হার্টের জন্য সবচেয়ে বেশি ওষুধের কাজ করে সবুজ চা। এটা শুধু রক্তের শিরাকেই সচল রাখে না, শিরাকে রক্ষাও করে। গবেষকদের ধারণা, রক্তনালির ওপর গ্রিন টির প্রভাব রয়েছে। নিয়মিত গ্রিন টি গ্রহণ করা হলে রক্তনালি শিথিল হয় এবং রক্তচাপের পরিবর্তন হলেও তা স্বাভাবিক থাকতে পারে। এর ফলে রক্ত জমাট বেঁধে হার্ট অ্যাটাক হওয়ার সম্ভাবনা কমে যায়।
ছয় গুণ এবং মাছ ও মাংসের চেয়ে তিন গুণ প্রোটিন রয়েছে, যা সম্পূর্ণ কোলেস্টেরলমুক্ত। আরও এতে রয়েছে পর্যাপ্ত ভিটামিন, মিনারেল, আয়রন, ফলিক এসিড ও এন্টি-অক্সিডেন্ট।
হার্টকে ভালো রাখতে হলে খাবারে তেলের পরিমাণ কমিয়ে দিন। এন্টি-অক্সিডেন্ট ও ভিটামিন 'ই'সমৃদ্ধ সূর্যমুখী তেল গ্রহণ করলে আপনার ত্বক সূর্যের ক্ষতিকারক রশ্মি থেকে সুরক্ষিত হবে। হাঁপানি (অ্যাজমা), আর্থ্রাইটিস এর
হার্টের জন্য উপকারী খাবার
ডায়াবেটিকসের ঝুঁকি কমানো ও ক্যানসার প্রতিরোধের পাশাপাশি দুর্বল হার্টের রোগীদের জন্য অলিভ অয়েল খুবই উপকারী। সম্প্রতি এক গবেষণায় বিষয়টি প্রমাণ করেছেন গবেষকরা। স্বাস্থ্য সাময়িকী সার্কুলেশনে প্রকাশিত নতুন গবেষণা প্রতিবেদনে দেখা গেছে, দুর্বল হার্টের জন্য জ্বালানি হিসেবে প্রয়োজনীয় চর্বির জোগান দেয় অলিভ অয়েল। সাধারণত একটি হৃদপিন্ড তার স্বাভাবিক সংকোচন ও প্রসারণের জন্য প্রয়োজনীয় শক্তি নেয় শরীরে জমা চর্বি থেকে। কিন্তু দুর্বল হার্ট এই চর্বি গ্রহণ করতে ব্যর্থ হয়। ফলে হার্ট শুধু ভালোভাবে কাজ করতে পারে না তা নয়, বরং গ্রহণ করতে না পারা চর্বি জমে হৃৎপিন্ডের আর্টারিতে বস্নক বা প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি হয়। অথচ অলিভ অয়েলে আছে ওলিয়েট নামের এক ধরনের উপকারী ফ্যাট যার সহায়তায় দুর্বল হার্ট সহজেই প্রয়োজনীয় চর্বি গ্রহণ করতে পারে।
বাদামের মধ্যে আনস্যাচুরেটেড ফ্যাট রয়েছে, যা হার্টের জন্যে উপকারী। পেনসিলভানিয়া স্টেট ইউনিভার্সিটির এক গবেষণা থেকে জানা গেছে, সপ্তাহে পাঁচ বারের বেশি যারা বাদাম খান, তাদের করোনারি হৃদরোগে মৃত্যুর সম্ভাবনা ২৫ থেকে ৩৯ শতাংশ পর্যন্ত কম। নিয়মিত বাদাম খেলে শরীরে উপকারী কোলেস্টেরল এইচডিএল-এর মাত্রা বাড়ে। সেই সঙ্গে বাদাম একটি লো-গ্লাইসেমিক ইনডেক্স সমৃদ্ধ খাবার, যা ডায়াবেটিস প্রতিরোধ এবং নিয়ন্ত্রণেও ভূমিকা রাখে। সব ধরনের বাদামই ভালো, তবে চীনাবাদাম সহজলভ্য বলে আপনি এটি প্রতিদিন খেতে পারেন।
হার্টের জন্য উপকারী ফল
রক্তে খারাপ কোলেস্টেরল হলো এলডিএল, রসুন এই এলডিএলের মাত্রা কমাতে দারুন উপকারী। পুষ্টিবিজ্ঞানীরা রসুনকে অভিহিত করেছেন প্রাকৃতিক এন্টিবায়োটিক হিসেবে। এছাড়াও রসুন উচ্চ রক্তচাপ ও রক্তে গ্লুকোজের মান নিয়ন্ত্রণে ভূমিকা রাখে। সেই সঙ্গে এটি ঠাণ্ডাজনিত যে কোনো সমস্যা এবং ফ্লু প্রতিরোধ করে। হৃৎপিণ্ডের সুস্থতা ও সার্বিক সুস্বাস্থ্যের জন্যে প্রতিদিন রসুনের একটি কোষ খান।
মেয়েদের হার্টের সমস্যার লক্ষণ
হার্টে ব্লক আছে/হয়েছেমেয়েদের হার্টের সমস্যার লক্ষণ কিনা তা কীভাবে বোঝা যায়?
অ্যাঞ্জিওগ্রাম করে বোঝা যায় হার্টে ব্লক আছে কি না। অ্যাঞ্জিওগ্রাম এক ধরনের ইমেজিং পরীক্ষা যেখানে এক্স-রে ব্যবহার করে শরীরের রক্তবাহগুলিকে নিখুঁত ভাবে দেখা সম্ভব। এই পরীক্ষার সাহায্যে শরীরের নানা জায়গার সরু, বড়, ব্লকড ও বিকৃত ধমনী বা শিরার অস্তিত্ব খুঁজে পাওয়া সম্ভব। এই পরীক্ষাটিকে যখন হার্টের কোথাও বা কোনও রক্তবাহের ব্লক খুঁজতে ব্যবহার করা হয় তখন তাকে করোনারি অ্যাঞ্জিওগ্রাম বলে। করোনারি অ্যাঞ্জিওগ্রাম করে বোঝা যায় হার্টের রোগ কতটা মারাত্মক অবস্থায় আছে এবং কারও হার্ট কতটা কার্যকর। করোনারি অ্যাঞ্জিওগ্রামে পাওয়া ছবির ভিত্তিতে পরবর্তীকালে স্টেন্ট-সহ অ্যাঞ্জিওপ্লাস্টি, বাইপাস সার্জারি বা ওষুধ প্রয়োগ করা যেতে পারে।
যেভাবে করা হয় এক্স-রে-তে ছবি পাওয়ার জন্য কার্ডিওলজিস্ট ক্যাথেটার নামে একটি সরু ও নমনীয় নলের মাধ্যমে ধমনীর মধ্যে কিছুটা তরল ডাই ঢুকিয়ে দেন। এর জন্য প্রয়োজনীয় ছোট্ট ছিদ্রটি সাধারণত বাহু বা কুচকিতে করা হয়। রক্তবাহের মধ্যে দিয়ে প্রবাহিত রক্ত ডাই-এর সঙ্গে মিশে গেলে এক্স-রে-তে দৃশ্যমান হয়ে ওঠে। তাই ধমনীর সরু হয়ে যাওয়া বা বন্ধ হয়ে যাওয়া অংশের অবস্থান বুঝতে পারা যায়। পরবর্তীকালে এই ডাই ধীরে ধীরে শরীরে শোষিত হয়ে প্রস্রাবের মাধ্যমে বাইরে বেরিয়ে যায়।
মোটামুটি ভাবে আধ ঘন্টার মধ্যে করোনারি অ্যাঞ্জিওগ্রাম হয়ে যায়, যদিও ক্ষেত্রবিশেষে আর একটু বেশি সময় লাগতে পারে। প্রসিডিওর চলাকালীন একটি নজরদারী ব্যবস্থার মাধ্যমে রোগীর হার্টের স্পন্দন নথিবদ্ধ করা হয়।
প্রসিডিওরের পরে হাসপাতালে বেশ কয়েক ঘন্টা অথবা এক রাত কাটাতে হতে পারে। ডিহাইড্রেশন এড়াতে আপনাকে পানীয় গ্রহণ করতে বলা হবে। শরীর থেকে ডাইকে বের করে দেওয়ার জন্যও পানীয় গ্রহণ জরুরি। বাড়ি যাওয়ার আগে স্বাস্থ্যকর্মী আপনাকে বুঝিয়ে দেবেন কিভাবে ক্ষত থেকে রক্তপাত এড়ানো যায়। এর পরে এক সপ্তাহ ধরে ভারি জিনিস ওঠানো এবং পরিশ্রমের কাজ করা থেকে বিরত থাকা ভাল।
জটিলতা
যে কোনও মেডিক্যাল প্রসিডিওরের মতো অ্যাঞ্জিওগ্রামেরও কিছু ঝুঁকি ও উপকারীতা থাকে।
ছোটখাটো জটিলতা
ক্ষতস্থানে চামড়ার তলা দিয়ে রক্তক্ষরণ (যদিও সাধারণত কয়েকদিনের মধ্যেই ঠিক হয়ে যায়)
ক্যাথেটার ব্যবহারের কারণে কয়েক সপ্তাহ ধরে ক্ষতস্থানটিতে কালশিটে থাকে
ব্যবহৃত ডাই থেকে অ্যালার্জি জনিত কারণে অনেকের ক্ষেত্রে র্যাশ বের হতে পারে। আপনার অ্যালার্জির সমস্যা থাকলে প্রসিডিওরের আগে কার্ডিওলজিস্টের সঙ্গে পরামর্শ করে নেবেন
হার্টের জন্য ক্ষতিকর ফল
বেশি জটিলতা
সাধারণত খুব বেশি কিছু জটিলতা হয় না, তবে নিচে আলোচিত কিছু সমস্যা হতে পারে-
হার্ট অ্যাটাক কিংবা স্ট্রোক হতে পারে
কনট্রাস্ট ডাই থেকে কিডনির ক্ষতি হতে পারে
এক্স-রে রেডিয়েশন বেশিক্ষণ ধরে চললে টিস্যু ক্ষতি হতে পারে
প্রচুর রক্তক্ষরণ উড়িয়ে দেওয়া যায় না
মৃত্যুও হতে পারে
জটিলতা বাড়তে পারে যদি-
আপনি বেশি বয়সী হোন (আসলে বয়স যত বেশি হবে ঝুঁকির পরিমাণও তত বাড়বে)
যদি আপত্কালীন পরিস্থিতিতে আপনার প্রসিডিওর না করা হয় (আসলে ওই রকম সময়ে হাতে খুব কম সময় থাকে বলে অনেক সময় বিপদ ঘটে যায়)
আপনার কিডনির রোগ থাকে (বিরল হলেও ব্যবহৃত ডাই কিডনির আরও ক্ষতি করে দিতে পারে
হার্টের সমস্যার লক্ষণ ও প্রতিকার। হার্টের রোগীর ওষুধ।
হৃদরোগ বাংলাদেশ সহ সারা বিশ্বে পুরুষ এবং মহিলা উভয়ের মৃত্যুর অন্যতম প্রধান কারণ। গবেষনা বলছে এটি মহিলাদের তুলনায় পুরুষদের মধ্যে বেশি হয়। পাশাপাশি খাদ্যাভ্যাস এর উপর ভিত্তি করেও জাতি ভেদে কম বেশি হতে পারে।
হৃদরোগ কি?
হৃদরোগ হল হার্টের স্বাভাবিক কার্যকারিতাকে প্রভাবিত করে এমন যে কোনো অবস্থা। এর মধ্যে রয়েছে জন্ম থেকেই হার্টের ত্রুটি যেমন হার্টে ছিদ্র (জন্মগত হার্টের ত্রুটি), হৃদপিন্ডের পেশীকে প্রভাবিত করে এমন রোগ, ধমনীর মাধ্যমে রক্ত চলাচলে বাধা (এটা করোনারি আর্টারি ডিজিজ যা হার্ট অ্যাটাক ঘটায়), হার্টের ভালভ ঠিকঠাক কাজ না করা বা হার্টবিট জনিত সমস্যা (অ্যারিথমিয়া)। হৃদরোগ হল এক ধরনের কার্ডিওভাসকুলার রোগ।
কোন কোন ধরনের কার্ডিওভাসকুলার রোগ হতে পারে?
কার্ডিওভাসকুলার রোগের বিভিন্ন প্রকার রয়েছে, এর মধ্যে প্রধান রোগগুলো হচ্ছেঃ
অ্যারিথমিয়া:
হার্ট দেহে রক্ত টিকমত পরিচালিত করতে না পারলে হার্টবিট বেড়ে যায়। এই অস্বাভাবিক হৃদস্পন্দনের কারণে এই রোগ হতে পারে।
ভালভ রোগ:
হার্টের ভালভ শক্ত হয়ে যাওয়া বা ফুটো হওয়া (ভালভ রক্তকে এক চেম্বার থেকে অন্য চেম্বারে বা রক্তনালীতে প্রবাহিত করতে সাহায্য করে)।
করোনারি আর্টারি ডিজিজ:
আপনার হার্টের রক্তনালীতে সমস্যা হওয়া, যেমন ব্লকেজ।
হার্ট ফেইলিউর:
হার্ট পাম্পিং বা ফাংশনে সমস্যা, যার ফলে ফুসফুসে ফ্লুইড জমা হয় এবং শ্বাসকষ্ট হয়।
পেরিফেরাল আর্টারি ডিজিজ:
আপনার হাত, পা বা পেটের পেশির রক্তনালীগুলি সংকুচিত হয়ে যাওয়া বা রক্ত চলাচলে বাধা পাওয়া।
মহাধমনী রোগ:
মহাধমনী বা প্রধান রক্তনালীতে সমস্যা যেটা হার্ট থেকে মস্তিষ্ক এবং শরীরের বাকি অংশে রক্ত পরিচালনা করে, যেমন অ্যানিউরিজম ।
জন্মগত হৃদরোগ:
আপনি হার্টের কোনো সমস্যা নিয়ে জন্মগ্রহণ করলে সেটা আপনার হার্টের স্বাভাবিক কার্যক্রমে বাধা হয়ে দাড়াতে পারে।
পেরিকার্ডিয়াল ডিজিজ:
পেরিকার্ডাইটিস এবং পেরিকার্ডিয়াল ইফিউশন সহ আপনার হার্টের বিশেষ পেশিতে সমস্যা ।
সেরিব্রোভাসকুলার রোগ
মস্তিষ্কে রক্ত সরবরাহকারী রক্তনালীগুলির সমস্যা, যেমন সংকীর্ণতা বা বাধা।
ডিপ ভেইন থ্রম্বোসিস (DVT):
শিরা, রক্তনালীতে ব্লকেজ যেগুলো মস্তিষ্ক/শরীর থেকে হার্টে রক্ত ফিরিয়ে আনে।
হার্টের সমস্যা হওয়ার বিভিন্ন কারণ
সাধারণত যেসব কারণে হার্টের রোগ হতে পারে তার মধ্যে প্রধান কারণগুলো হচ্ছে-
হার্টের বিভিন্ন অংশ ক্ষতিগ্রস্থ হওয়া
রক্তনালীতে সমস্যা
হার্টে অক্সিজেন এবং পুষ্টি কম সরবরাহ হওয়া
হার্টবিট জনিত সমস্যা
কিছু ক্ষেত্রে, জেনেটিক কারণও রয়েছে। যাইহোক, জীবনযাত্রার ধরন এবং বিভিন্ন চিকিৎসাও হার্টের রোগের ঝুঁকি বাড়াতে পারে। এর মধ্যে রয়েছে:
উচ্চ রক্তচাপ
উচ্চ কলেস্টেরল
ধূমপান
অধিক অ্যালকোহল পান করা
অতিরিক্ত ওজন এবং স্থূলতা
ডায়াবেটিস
হৃদরোগের পারিবারিক ইতিহাস
প্রভাবক হিসেবে কাজ করে এমন খাবার খাওয়া
বয়স
পরিশ্রম কম করার প্রবণতা
নিদ্রাহীনতা
উচ্চ চাপ এবং উদ্বেগ ইত্যাদি
হার্টের সমস্যার লক্ষণগুলির কি কি?
হার্টের সমস্যার অনেকগুলো লক্ষণ থাকতে পারে। তার মধ্যে প্রধান সমস্যাগুলো নিয়ে নিচে আলোচনা করা হলঃ
হার্টের ব্যথা কোথায় হয়
বুকে ব্যথার মানে হল বুকে অস্বস্তি বা ব্যথা অনুভব করা, যা আপনি আপনার শরীরের সামনে, আপনার ঘাড় বা পেটের উপরের দিকে অনুভব করেন। বুকে ব্যথার অনেক কারণ রয়েছে যার সাথে আপনার হার্টের কোন সম্পর্কই নেই।
কিন্তু বুকে ব্যথা প্রকৃত অর্থেই হার্টে দুর্বল রক্ত প্রবাহ বা হার্ট অ্যাটাকের সবচেয়ে সাধারণ লক্ষণ। এই ধরনের বুকে ব্যথাকে এনজাইনা বলে।
হৃদপিন্ডে পর্যাপ্ত রক্ত বা অক্সিজেন সাপ্লাই না হলে বুকে ব্যথা হতে পারে। ব্যথার পরিমাণ এবং ধরন ব্যক্তিভেদে ভিন্ন হতে পারে। ব্যথার তীব্রতা দ্বারা সমস্যা কতটা গুরুতর তা সব সময় বুঝা যায় না।
অনেকে তীব্র ব্যথা অনুভব করতে পারে, তবে কেউ কেউ শুধুমাত্র হালকা অস্বস্তি অনুভব করে।
মনে হতে পারে আপনার বুক ভারী হয়ে গিয়েছে কিংবা আপনার হার্ট কেউ চেপে ধরেছে। অনেক সময় আপনার বুকে জ্বালাপোড়া অনুভব করতে পারেন।
আপনি আপনার স্তনের হাড়ের নীচে বা আপনার ঘাড়ে, বাহুতে, পেটে, চোয়ালে বা উপরের পিঠে ব্যথা অনুভব করতে পারেন।
এনজাইনার কারণে বুকে প্রায়শই যে ব্যাথা শুরু হয় তা বিশ্রাম নেওয়ার মাধ্যমে অনেক সময় স্বাভাবিক হয়ে যায়। নাইট্রোগ্লিসারিন নামক ওষুধ সেবনের মাধ্যমেও এই ব্যাথা থেকে পরিত্রাণ পাওয়া যায়।
কখনো কখনো বদহজমের কারণেও বুকে ব্যথা হতে পারে।
মহিলা, বয়স্ক এবং ডায়াবেটিসে আক্রান্ত ব্যক্তিদের ক্ষেত্রে অনেক সময় দেখা যায় বুকে ব্যথা একদমই কম বা নেই। কিন্তু বুকে ব্যথা ছাড়া অন্যান্য উপসর্গও থাকতে পারে, যেমন:
ক্লান্তি
নিঃশ্বাসে অসুবিধা
সাধারন দূর্বলতা
ত্বকের রঙ ধূসর ফ্যাকাশে হয়ে যাওয়া (ত্বকের রঙ অনেক সময় দুর্বলতার সাথে সম্পর্কিত)
হার্ট অ্যাটাকের অন্যান্য যে লক্ষণগুলি থাকতে পারে:
চরম উদ্বেগ
অজ্ঞান বা অচেতন হওয়া
হালকা মাথা ব্যথা বা মাথা ঘোরা
বমি বমি ভাব বা বমি হওয়া
বুক ধড়ফড় করা (হৃদপিণ্ড খুব দ্রুত বা অনিয়মিতভাবে স্পন্দিত হচ্ছে বলে মনে হচ্ছে এমন)
নিঃশ্বাসের দুর্বলতা
অতিরিক্ত ঘাম হওয়া
নিঃশ্বাসে অসুবিধা
হৃৎপিণ্ড যখন রক্ত পাম্প করতে পারে না, তখন ফুসফুস থেকে হৃদপিণ্ডে যাওয়া রক্ত শিরায় জমা হয়। ফলে অক্সিজেন সরবরাহ বাধাপ্রাপ্ত হয়, যা শ্বাসকষ্টের কারণ হয়। এটি হার্ট ফেইলিউরের একটি উপসর্গ আপনার কখন শ্বাসকষ্ট হয় তা লক্ষ্য করতে পারেনঃ
কার্যকলাপের সময়
আপনি যখন বিশ্রাম করছেন
আপনি যখন চিত হয়ে শুয়ে থাকেন। এটি আপনাকে অনেক সময় ঘুম থেকে জাগিয়েও তুলতে পারে।
কাশি বা শ্বাসকষ্ট
কাশি বা শ্বাসকষ্ট দূর না হওয়া হার্ট এটাকের আরেকটি লক্ষণ হতে পারে, কারণ হয়ত আপনার ফুসফুসে ফ্লুইড জমা হচ্ছে। সেক্ষেত্রে কাশির সময় কফের সাথে গোলাপী বা রক্তাক্ত মিউকাস ও দেখতে পারেন।
পায়ের পাতা, গোড়ালি বা পায়ে ফোলাভাব
আপনার পায়ের নিচে ফোলা (edema ও বলা হয়ে থাকে) হার্টের সমস্যার আরেকটি লক্ষণ। যখন আপনার হৃদপিণ্ড ভালোভাবে কাজ করে না, তখন আপনার পায়ের শিরাগুলিতে রক্তর প্রবাহ ধীর গতিতে হয় কিংবা বাধাগ্রস্ত হয়। যার ফলে আপনার পায়ের পেশিতে ফ্লুইড জমতে পারে।
রক্তনালী সংকুচিত হয়ে যাওয়া
শরীরের বিভিন্ন অংশে রক্ত নিয়ে আসা রক্তনালীগুলো সংকুচিত হওয়ার অর্থ হচ্ছে আপনার হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকি অনেক বেড়ে যাওয়া। ধমনীর প্রাচীরে কোলেস্টেরল এবং অন্যান্য ফ্যাট জাতীয় উপাদান জমে থাকলে এটি হতে পারে।
য়ে ঠিকমত রক্ত সরবরাহ না হলে যে সমস্যাগুলো হতে পারেঃ
পায়ের পেশী বা উরুতে ব্যথা
ক্লান্তি, জ্বালাপোড়া ভাব বা অস্বস্তি অনুভব হওয়া
প্রায়ই হাঁটা বা ব্যায়ামের সময় যে লক্ষণগুলো দেখা যায় এবং কয়েক মিনিট বিশ্রামের পর চলে যায়।
বিশ্রামে থাকার সময় পা অসাড় হয়ে যাওয়া। তখন পায়ে ঠান্ডা অনুভূত হতে পারে এবং ত্বক ফ্যাকাশে দেখাতে পারে।
ক্লান্তিভাব
ক্লান্তির অনেক কারণ থাকতে পারে। সাধারণত ক্লান্তি অনুভব হয় যখন আপনি অনেক পরিশ্রম করেন। কিন্তু ক্লান্তিভাব কখনো কখনো গুরুতর সমস্যার লক্ষণ হতে পারে। এটা হার্টের সমস্যার লক্ষণ হতে পারে যখন:
আপনি স্বাভাবিকের চেয়ে অনেক বেশি ক্লান্ত বোধ করেন।
আপনি এতটাই ক্লান্ত বোধ করেন যে আপনি আপনার স্বাভাবিক দৈনন্দিন কাজকর্ম করতে পারেন না।
আপনি হঠাৎ করে খুব দুর্বল হয়ে যান।
অস্বাভাবিক হার্টবিট
যদি হৃদপিণ্ড ঠিকমতো রক্ত পাম্প করতে না পারে, তবে হার্ট আরও দ্রুত পাম্প করতে থাকে। হার্টবিট দ্রুত হলে তা আপনি নিজেই বুঝতে পারবেন। দ্রুত বা অস্বাভাবিক হৃদস্পন্দন অ্যারিথমিয়ার (arrhythmia) লক্ষণ হতে পারে।
কখন ডাক্তারের কাছে যাওয়া উচিত?
আপনার যদি হৃদরোগের কোনো লক্ষণ প্রকট হয়ে থাকে, তাহলে অবিলম্বে আপনার ডাক্তারের কাছে যাওয়া উচিত। যে উপসর্গগুলি দেখা দেয় সেগুলো ঠিক হয়ে যাবে এটা ভেবে কখনই ঘরে বসে থাকবেন না। গুরুতর অবস্থা হলে ইমার্জেন্সি নাম্বারের মাধ্যমে ডাক্তারের সাথে যোগাযোগ করুন।
দ্রত ডাক্তারের সাথে যোগাযোগ করুন, যদি:
আপনার বুকে ব্যথা বা হার্ট অ্যাটাকের অন্যান্য লক্ষণ দেখা যায়
আপনি জানেন যে আপনার এনজাইনা আছে এবং আপনার বুকে ব্যথা আছে যা ৫-১০ মিনিট বিশ্রামের পরে বা নাইট্রোগ্লিসারিন গ্রহণের পরেও যায় না
আপনি মনে করেন আপনার হার্ট অ্যাটাক হতে পারে
আপনার খুব শ্বাসকষ্ট হয়
আপনি ভাবছেন আপনি হয়তো জ্ঞান হারিয়ে ফেলেছেন
হার্টের রোগের চিকিৎসা
একজন ব্যক্তির হৃদরোগের ধরণের উপর নির্ভর করে চিকিৎসার পরিবর্তন হবে। তবে কিছু সাধারণ বিষয়ের মধ্যে রয়েছে জীবনযাপন পরিবর্তন করা, ওষুধ গ্রহণ করা এবং অস্ত্রোপচার করা।
যে ওষুধগুলো প্রয়োজনীয়
বিভিন্ন ওষুধ হৃদরোগের চিকিৎসায় সাহায্য করতে পারে। প্রধান ওষুধের প্রকারগুলো হচ্ছেঃ
অ্যান্টিকোয়াগুলেন্টস:
এই ওষুধগুলি জমাট বাঁধা প্রতিরোধ করতে পারে।
অ্যান্টিপ্লেটলেট থেরাপি:
এর মধ্যে রয়েছে অ্যাসপিরিন যা জমাট বাঁধা প্রতিরোধ করতে পারে।
অ্যাঞ্জিওটেনসিন; রিসেপ্টর ব্লকার:
এগুলি রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ করতে পারে।
অ্যাঞ্জিওটেনসিন রিসেপ্টর নেপ্রিলিসিন ইনহিবিটরস:
এগুলি হৃৎপিণ্ডকে কাজে বাধা দেয় এবং দুর্বল করে দেয় এমন উপাদানগুলোর কাজ বাধাগ্রস্ত করে।
বিটা-ব্লকার:
এই শ্রেণীর অন্যান্য ওষুধ হৃদস্পন্দন এবং রক্তচাপ কমাতে পারে। তারা অ্যারিথমিয়া এবং এনজিনারও চিকিৎসা করতে পারে।
ক্যালসিয়াম চ্যানেল ব্লকার:
এটা রক্তচাপ কমাতে পারে এবং রক্তনালীকে শিথিল করে অ্যারিথমিয়া প্রতিরোধ করতে পারে।
কোলেস্টেরল হ্রাসকারী ওষুধ:
এধরনের ওষুধ শরীরের কোলেস্টেরলের মাত্রা কমাতে সাহায্য করতে পারে।
ডিজিটালিস:
এটি হৃৎপিণ্ডের পাম্পিং এর শক্তি বাড়াতে পারে। হার্ট ফেইলিওর এবং অ্যারিথমিয়াসের চিকিৎসায়ও কাজে লাগে।
ডাই-ইউরেটিক্স:
এই ওষুধগুলি শরীর থেকে অতিরিক্ত তরল অপসারণ করে রক্তচাপ কমাতে পারে।
এগুলি রক্তচাপ কমানোর ওষুধ। এটা বুকের ব্যথা কমাতেও সাহায্য করতে পারে।
সাধারণত ডাক্তার রোগের ধরন বুঝে রোগীকে প্রয়োজনীয় ওষুধ গ্রহনের পরামর্শ দেন।
কার্ডিওভাস্কুলার রোগের সার্জারি
সাধারণত রোগ গুরুতর হলে এবং ওষুধ কার্যকর না হলে ব্লকেজ এবং হার্টের সমস্যা সমাধানে হার্ট সার্জারি একমাত্র সমাধান হতে পারে।
এরকম কিছু সার্জারী নিয়ে নিচে আলোচনা করা হলঃ
করোনারি আর্টারি বাইপাস সার্জারি:
কোনো কারণে ধমনী ব্লক হয়ে গেলে শরীরের অন্য অংশ থেকে একটি সুস্থ রক্তনালী ব্যবহার করে রক্ত প্রবাহকে হার্ট থেকে শরীরের অন্যান্য অংশে পৌঁছাতে সাহায্য করে এটি।
করোনারি এনজিওগ্রাফি:
এটি এমন একটি পদ্ধতি যার মাধ্যমে সংকুচিত বা অবরুদ্ধ ধমনীকে প্রশস্ত করে রক্ত চলাচলের উপযোগী করে তোলা হয়।
ভালভ প্রতিস্থাপন:
কোনো ভালভ যদি ঠিকমতো কাজ না করে তাহলে অন্য একটি ভালভ সেখানে প্রতিস্থাপন করে হার্টকে কার্যকর করে তোলা হয়।
হার্ট রিপেয়ার:
জন্মগত হার্টের ত্রুটি, অ্যানিউরিজম এবং অন্যান্য সমস্যাগুলি মেরামত করা
ডিভাইস ইমপ্লান্টেশন:
পেসমেকার , বেলুন ক্যাথেটার এবং অন্যান্য ডিভাইস যা হৃদস্পন্দন নিয়ন্ত্রণ করতে এবং রক্ত প্রবাহে সহায়তা করতে পারে।
লেজার চিকিৎসা:
ট্রান্সমায়োকার্ডিয়াল লেজার রিভাসকুলারাইজেশন এনজাইনার চিকিৎসায় সাহায্য করতে পারে।
কীভাবে হার্টের সমস্যা প্রতিরোধ করবেন?
মুলত জীবনযাপনের কিছু পরিবর্তন হৃদরোগের ঝুঁকি কমাতে সাহায্য করতে পারে। সেরকম কিছু বিষয় হচ্ছেঃ
সুষম খাবার খাওয়া:
হার্টের সমস্যা থেকে বাঁচতে স্বাস্থ্যকর খাবারের কোনো বিকল্প নেই। ফাইবার সমৃদ্ধ খাবার, তাজা ফল, শাকসবজি খাওয়ার অভ্যাস গড়ে তুলুন। প্রক্রিয়াজাত খাবার এবং প্রানীজ চর্বি, লবণ এবং চিনিযুক্ত খাবার খাওয়া যথাসম্ভব কমিয়ে ফেলুন।
নিয়মিত ব্যায়াম করা:
নিয়মিত ব্যায়াম হৃৎপিণ্ড ও রক্ত সংবহনতন্ত্রকে শক্তিশালী করতে, কোলেস্টেরল কমাতে এবং রক্তচাপ বজায় রাখতে সাহায্য করতে পারে । একজন ব্যক্তির প্রতি সপ্তাহে কমপক্ষে ১৫০ মিনিট ব্যায়ামের করা উচিত।
শরীরের মাঝারি ওজন বজায় রাখা:
একজন স্বাস্থ্যবান মানুষের Body mass index (BMI) হওয়া উচিত সাধারণত ১৮.৫ থেকে ২৪.৯ এর মধ্যে।
ধূমপান ত্যাগ করা বা এড়িয়ে চলা:
ধূমপান হার্ট এবং কার্ডিওভাসকুলার রোগের ঝুঁকির একটি প্রধান কারণ।
অ্যালকোহল সেবন কমানো:
অ্যালকোহল সেবন খুবই নিয়ন্ত্রণের মধ্যে করা উচিত, সবচেয়ে ভালো হয় সেবন ত্যাগ করতে পারলে।
প্রয়োজনীয় ব্যাবস্থা গ্রহণ:
উচ্চ রক্তচাপ, স্থূলতা এবং ডায়াবেটিস এর মতো রোগ হৃদরোগকে প্রভাবিত করে। তাই এগুলোর জন্য প্রয়োজনীয় চিকিৎসা নিন।
এই বিষয়গুলো মাথায় রেখে স্বাস্থ্য ঠিক রাখার চেষ্টা করলে হৃদরোগ এবং এর জটিলতার ঝুঁকি অনেকটাই কমাতে পারবেন
আজকের আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url